ঢাকা , বুধবার, ২১ মে ২০২৫ , ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কলমবিরতির প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট ভারতীয় গরু নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা কোরবানির চামড়া সংগ্রহে দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিএ কালো টাকা সাদা করার সব সুযোগ চিরতরে বাতিল চায় টিআইবি শেরপুরে বন্যার শঙ্কা নটরডেম কলেজে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্যের জট খুলছে না বৃষ্টি ও তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে নগরবাসী মহার্ঘ ভাতার বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায়-অর্থ উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় নির্বাচন হোক-সারজিস ১৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ভিত্তি নষ্ট করা হয়েছে-বাণিজ্য উপদেষ্টা সুপরিকল্পিতভাবে জাতীয় নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা চলছে-ফখরুল জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির কর্মসূচি স্টারলিংকের যাত্রা শুরু বাংলাদেশে মাসে সর্বনিম্ন খরচ ৪২০০ টাকা ব্যক্তিগত আক্রমণ করে লাভ নেই, আদালতে লড়তে হবে-আসিফ মাহমুদ মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ না পড়ানো নিয়ে রিটের আদেশ আজ দাবির ইস্যুতে ক্লান্ত ঢাকা ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের ১৮২২.৯৮ কোটি টাকা দাবি করে হাইকোর্টে আবেদন দায়ের কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত নুসরাত ফারিয়া সাত মাস ধরে বাসায় আটকে ধর্ষণ, গায়ক নোবেল কারাগারে
* নগরীর মিরপুরে দুটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে * শহীদ পরিবার ১২৫০ ও আহতরা ১০০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট পাবেন * রাজধানীতে ১৪০০-১৫০০ ফ্ল্যাট তৈরির পরিকল্পনা * ২ বছরে শেষ হবে প্রকল্প, বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার

  • আপলোড সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:৩৭:৫১ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৯-০৫-২০২৫ ০৭:৩৭:৫১ অপরাহ্ন
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার-আহতদের ফ্ল্যাট দেবে সরকার
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও চূড়ান্তভাবে অক্ষম আহতদের (গুরুতর আহত) ফ্ল্যাট দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। রাজধানীর মিরপুরে নেয়া হচ্ছে দুটি প্রকল্প। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৪শ-১৫শ ফ্ল্যাট নির্মাণের চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী শহীদ পরিবারকে ১২৫০ বর্গফুট ও গুরুতর আহতদের এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেয়া হবে। দুই বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ।
প্রাথমিকভাবে দুই প্রকল্পে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, সড়ক, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদি সুবিধাগুলো বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হবে। তাই ব্যয় অনেকটাই কমে যাবে। ব্যয়ের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের জুলাই মাসে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলন একসময় সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। শেষে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। আন্দোলনে শহীদ হন শত শত ছাত্র-জনতা। আহতও হন কয়েক হাজার মানুষ। গত ১৫ জানুয়ারি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের ৮৩৪ জন শহীদের তালিকার গেজেট প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া কয়েক দফায় ‘জুলাই যোদ্ধা’ হিসেবে তিনটি ক্যাটাগরিতে (‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ শ্রেণি) আহতদের তালিকাও প্রকাশ করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ‘ক’ ক্যাটাগরির (অতি গুরুতর আহত) ৪৯৩ জনের নামের তালিকার গেজেট প্রকাশ করা হয়। তালিকা করার দায়িত্বে স্বাস্থ্য বিভাগ থাকলেও তালিকা প্রকাশ করছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এতে শহীদ ও আহতদের নাম ছাড়াও গেজেট নম্বর, মেডিকেল কেস আইডি, বাবার নাম, বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-২০২৪ এ শহীদ পরিবারের সদস্যদের কল্যাণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নীতিমালা, ২০২৫’ অনুযায়ী অতি গুরুতর আহতরা ‘ক্যাটাগরি-এ’ অন্তর্ভুক্ত হবেন। উভয় হাত বা পাবিহীন, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন, সম্পূর্ণভাবে মানসিক বিকারগ্রস্ত ও স্বাভাবিক কাজ করতে অক্ষম- এমন আহত ব্যক্তি অতি গুরুতর আহত হিসেবে বিবেচিত হবেন। প্রকল্প দুটি দ্রুত চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, গত ৪ মে প্রকল্প এলাকার ভেতরে প্রয়োজনীয় পরিষেবা (গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ, সড়ক, মসজিদ, স্কুল ইত্যাদি) সুবিধা দিতে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেন। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। এর আগে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ও নিজেরা একটি বৈঠক করে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, শহীদ পরিবার ও চূড়ান্তভাবে অক্ষম আহত পরিবারের জন্য এটি করা হচ্ছে। আহতদের তিনটি ক্যাটাগরি করা হয়েছে। ক-ক্যাটাগরির আহতদের আমরা ফলো করবো। শহীদ ও চূড়ান্ত অক্ষম আহত সবাইকে ফ্ল্যাট দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। পূর্ণ সম্মান আমরা নিহত ও আহতদের দিতে চাই।
মিরপুরে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের জমিতে দুটি প্রকল্পের অধীনে আবাসনটা তৈরি করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, মিরপুর-১৪ নম্বর সেক্টরে পুলিশ স্টাফ কলেজের উল্টো দিকে একটি প্রকল্প নেয়া হবে। মিরপুর-৯ এ পল্লবী থানার পেছনে আরেকটি প্রকল্প নেয়ার চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। শহীদ পরিবারকে ১২৫০ বর্গফুট ও চূড়ান্তভাবে অক্ষম আহত পরিবারকে এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট দেয়া হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, সেখানে সব ধরনের পরিষেবাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্প এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, দোকান, কমিউনিটি সেন্টার, মার্কেটসহ অন্য প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। দু’বছরের মধ্যে প্রকল্প দুটি শেষ করা হবে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করবে।
জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের ধরনভেদে ‘ক’, ‘খ’, এবং ‘গ’ শ্রেণিতে ভাগ করে সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, আহত বা জুলাই যোদ্ধারা আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন এবং তারা ভাতাও পাবেন। যারা অতি গুরুতর আহত (ক-শ্রেণি) তারা এককালীন পাঁচ লাখ টাকা পাবেন এবং প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাবেন। একটি অঙ্গহানি হয়েছে এমন আহত (খ-শ্রেণি) যারা আছেন তারা প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন এবং তারা এককালীন তিন লাখ টাকা পাবেন। সামান্য আহত (গ-শ্রেণি) যারা ছিলেন, চিকিৎসা নিয়েছেন, ভালো হয়ে গেছেন, তারা চাকরিসহ পুনর্বাসন কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তারা কোনো ভাতা পাবেন না। যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পরিবারকে সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়া হচ্ছে, আগামী অর্থবছরে তারা বাকি ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র পাবেন।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-১) মো. আব্দুল মতিন বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও গুরুতর আহতদের কীভাবে সুবিধা দেয়া যায়, সেটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এজন্য জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এটি নিয়ে কাজ করছে। তারা প্রাথমিকভাবে একটি প্রস্তাবও দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ও সেই বিষয়টি পজিটিভলি চিন্তা-ভাবনা করছে। বিষয়টি এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এটি নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, কোন পর্যায়ে কী করা যায়। প্রকল্প করতে কত টাকা লাগবে, কোথায় করবো, কতজনের জন্য করবো, কীভাবে করবো- সবকিছুই আলোচনার মধ্যে রয়েছে। একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। একটি প্রকল্প নিতে গেলে অনেকগুলো কনসেপ্টচুয়াল ইস্যু আছে। সর্বোচ্চ পর্যায়ের অনুমোদনের বিষয় রয়েছে।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, এ বিষয়ে একটা চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে, কথা উঠেছে আমাদের দিক থেকে এদের (অভ্যুত্থানে নিহত-আহত) জন্য কিছু করা উচিত। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এটি অনুমোদিত হলে এ বিষয়ে বলা যাবে। 
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স